বিষয় ভিত্তিক পোস্ট

বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬

দেখুন, ভূমিকম্প কী ও কেনো হয়? কোরান ও হাদিস,এবং বিজ্ঞান সম্মত দলীল।

★ভূমিকম্প★
.
ভুমিকম্প কী?
ভূমিকম্প কেন হয়??
এর বৈজ্ঞানিক বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা কী???
.
ভূমিকম্প কী?
 সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পৃথিবী যখন কাঁপা কাঁপি করে , তখন তাকে ভূমিকম্প বলা হয়। প্রকৃতির নিয়মে মাটির নিচে সৃষ্ট আলোড়নের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের কোনো কোনো অংশ হঠাৎ কেঁপে ওঠে। আর এই কেঁপে ওঠাকেই আমরা বলি ভূমিকম্প। অনুমান করা হয়, প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ বার বা আরও বেশি বার ভূমিকম্প হয় । আর এগুলোর ভিতর হয়ত মানুষ ১ ভাগ বুঝতে পারে। অনেক সময়ই সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প হয়, সেই গুলা অনেক সময় বুঝতে পারিনা । তবে সাগর তলে বড় সড় ভূমিকম্প হলে সুনামি হতে পারে।
.
ভুমিকম্প কেন হয়?
ধর্মীয় ব্যাখ্যা :
আবু হুরাইরা (রা.) কতৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খিয়ানত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না), জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু তার মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে, জাতির সবচেয়ে দূর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রুপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হয়ে যাবে, মদ পান করা হবে (বিভিন্ন নামে মদ ছড়িয়ে পড়বে), শেষ বংশের লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দিবে, এমন সময় আসবে যখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে তখন একটি ভূমিকম্প সেই ভূমিকে তলিয়ে দিবে (ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে বা পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাবে)।
তিরমিযি কতৃক বর্ণিত, হাদিস নং – ১৪৪৭] এই হাদিসের মাঝে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে জমিনে কখন ভুমিকম্পের আজাব প্রদান করা হয় এবং কেন প্রদান করা হয়।
 -ভূমিকম্প নিয়ে পবিত্র ক্বোরআনের কয়েকটি আয়াতের উদ্ধৃতি:
১। অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকাল বেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (আল আ’রাফঃ৭৮)
২। অনন্তর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে তারা সকাল বেলায় গৃহ মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (আল আ’রাফঃ ৯১
৩। কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল; অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল এবং নিজেদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (আল আনকাবুতঃ ৩৭)
৪। অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। (হুদঃ ৮২
৫। অতঃপর আমি জনপদটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর কঙ্করের প্রস্থর বর্ষণ করলাম। (আল হিজরঃ৭৪)
৬। তিনিই (আল্লাহ) জনপদকে শুন্যে উত্তোলন করে নিক্ষেপ করেছেন। (আন নাজমঃ৫৩
৭। আর মূসা বেছে নিলেন নিজের সম্প্রদায় থেকে সত্তর জন লোক আমার প্রতিশ্রুত সময়ের জন্য। তারপর যখন তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তখন বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, তুমি যদি ইচ্ছা করতে, তবে তাদেরকে আগেই ধ্বংস করে দিতে এবং আমাকেও। আমাদেরকে কি সে কর্মের কারণে ধ্বংস করছ, যা আমার সম্প্রদায়ের নির্বোধ লোকেরা করেছে? এসবই তোমার পরীক্ষা; তুমি যাকে ইচ্ছা এতে পথ ভ্রষ্ট করবে এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথে রাখবে। তুমি যে আমাদের রক্ষক-সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের উপর করুনা কর। তাছাড়া তুমিই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী। (আল আ’রাফঃ১৫৫
৮। যেদিন (কেয়ামতের দিন) প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী, (আন নাজিয়াতঃ ৬
৯। যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী। এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা। (আল ওয়াক্বিয়াঃ৪-৬
১০। সেদিন আকাশ প্রকম্পিত হবে প্রবলভাবে। এবং পর্বতমালা হবে চলমান, (আত তুরঃ৯-১০)
১১। যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে, যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে এবং মানুষ বলবে, এর কি হল ? সেদিন সে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। (আয যিলযালঃ১-৪)
১২। যেদিন পৃথিবী পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ হয়ে যাবে বহমান বালুকাস্তুপ। (আল মুযযাম্মিলঃ১৪)
১৩। হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। (আল হাজ্জ্বঃ১)
.
আয়াতগুলোকে দুভাগে বিভক্ত করা যায়। ১-৭ পর্যন্ত আয়াতগুলোতে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করার কারণে শাস্তির কথা রয়েছে। তম্মধ্যে ৪,৫,৬ নং আয়াতগুলো একটি ঐতিহাসিক ঘঠনার বর্ণনা করে।
তাহলো, আমরা জর্দানের সেই Death Sea বা মৃত সাগরের নাম শুনেছি যাতে কোন মাছ বাঁচতে পারে না এবং সাঁতার ছাড়া মানুষ শুয়ে থাকতে পারে কিন্তু ডুবে না। ঐ এলাকাটি ছিল আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হযরত লূত (আঃ) এর। তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে সমকামিতা ছিল অতি সাধারণ একটি ব্যাপার। লূত (আঃ) তাঁদেরকে অনেক উপদেশ দেয়ার পরও ঐ কাজ থেকে তাদেরকে ফেরাতে পারেন নি। অবশেষে আল্লাহ লূত (আঃ) কে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে রাত শেষ হওয়ার আগেই জনপদ ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ দিলেন। লূত (আঃ) তাই করলেন এবং ঐ রাতেই আল্লাহ জনপদটিকে উল্ঠিয়ে দিলেন যার ফলে নিচের খনিজ লবন ও অন্যান্য উপাদান উপরে উঠে আসে এবং উপরের সবকিছু ভূ-গর্ভে চলে যায়। সৃষ্টি হয় আজকের Death Sea বা মৃত সাগর (বিস্তারিত আলোচনা হাদিস আর সংশ্লিষ্ট সূরাগুলোতে রয়েছে) । বিজ্ঞানীদের মতে ঐ সাগরের পানিতে লবণের ঘনত্ব এত বেশি যে তাতে কোন প্রাণী বেঁচে থাকা অসম্ভব।
৮-১৩ আয়াতগুলো কেয়ামতের দিনটি কী রকম হবে, পৃথিবীতে কী ঘঠবে তার একটি বর্ণনা মাত্র। অর্থাৎ কেয়ামতের দিন যে সব ঘঠনাবলী ঘঠবে তার অন্যতম একটি হলো ভূমিকম্প। পবিত্র ক্বোরআন আর হাদীসের বর্ণনা মতে কেয়ামতের দিন প্রচন্ড ভূমিকম্প হবে যা দেখে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে এদিক উদিক পালাতে শুরু করবে। উক্ত আয়াতগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে, ভূমিকম্প সৃষ্টিকর্তার আদেশে সংঘঠিত একটা ঘঠনা। পবিত্র ক্বোরআনের মতে, পৃথিবীর শুরু থেকেই আল্লাহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন এবং তাঁদের মাধ্যমে তাঁদের সম্প্রদায়কে আদেশ-উপদেশ দিতেন। যারা নবী-রাসূলের বিরুদ্ধে গেছে, আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে আল্লাহ তাদেরকে বিভিন্নভাবে শাস্তি প্রদান করেছেন। বজ্রপাত, প্লাবন, ঘূর্ণিঝড়, প্রস্তরসহ বায়ু, জীবানুযুক্ত বায়ু, ভূমিকম্প, মহামারি রোগ, দুর্ভিক্ষ সহ অসংখ্য শাস্তির কথা পবিত্র ক্বোরআনে রয়েছে। এছাড়া কাউকে আবার পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছে। যেমন বর্তমানে মিশরের জাদুঘরে রক্ষিত ফেরাউন তার একটি জলন্ত উদাহরন। আল্লাহ ফেরাউন ও তার বাহিনীকে নীলনদে ডুবিয়ে মেরেছিল। এ ব্যাপারে সূরা ইউনূস, সূরা আল আ’রাফ, সূরা ত্বোহা সহ পবিত্র ক্বোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এবং হাদীসে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এসব শাস্তি যেমন অপরাধের জন্য সাজা তেমনি পরবর্তী সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা, যাতে তারা সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারে। ক্বোরআন আর হাদীস ব্যাখ্যামতে পাপাচারের কারণে আল্লাহ কোন জনবসতিতে এ ধরনের শাস্তি প্রদান করে থাকেন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ
জ্ঞানের বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া মতে “ ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীরনের জন্য যে
শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হটাৎ মুক্তি
ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষনিকের জন্য কেঁপে ওঠে
এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষনস্থায়ী
কম্পনকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে। কম্পন-
তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা
ভূমিকম্পের মধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ
ভূ-গর্ভের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন
হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে
পরে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখান থেকে
ভূকম্প-তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, তাকে ভূমিকম্পের
কেন্দ্র বলে। এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন
ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে সব দিকে ছরিয়ে
পড়ে। শিলার পীড়ন-ক্ষমতা সহ্যসীমার
বাহিরে চলে গেলে শিলায় ফাটল ধরে ও
শক্তির মুক্তি ঘটে। তাই প্রায়শই
ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা অংশে
অবস্থান করে। সাধারনত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬
কিমি.-র মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে।
তবে ৭০০ কিমি. গভীরে গুরুমণ্ডল (Mantle)
থেকেও ভূ-কম্পন উত্থিত হতে পারে ”।
.
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
আমিন:::

Posted By : হাফিজ মোঃ নাছির উদ্দিন
ফেইসবোকে আমি 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন