বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ছিল সেই যুদ্ধ। আমাদের পূর্বসূরিরা সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন অস্ত্রহাতে জীবনের ভয়কে উপেক্ষা করে। দেশের স্বার্থে দেশের জনগনের স্বার্থে, একটি শোষণহীন-নিরাপদ এবং শান্তির বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্বার্থে। পাকিস্তানি শোষকরা আমাদের ওপর বর্বরতা, শোষণ, নিপীড়ন এবং অত্যাচার চাপিয়ে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়; ওরা আমাদের মুখের ভাষাও কেড়ে নিতে চেয়েছিল। ধর্মের আবরণ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। জারি, সারি, ভাটিয়ালী এবং লালনের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশকে সাম্প্রদায়িকরণ করতে চেয়েছিল। ভয় দেখিয়েছিল, হামলে পড়েছিল রক্তপিপাসু পাকিস্তানি শোষকরা। লাভ হয়নি বরং ওদের দেখানো ভয়কে জয় করে বাংলার জনতা ওদের রুখে দিয়েছিল। বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশের। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে কাগজে-কলমে বাংলাদেশের জনতার বিজয় হলেও পরাজিতরা থেমে থাকেনি। তাদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত অব্যাহতভাবে চালিয়েছে যা এখনো ক্রীয়াশীল। পাকিস্তানের জামায়াত পাকিস্তানকে রক্ষার নামে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে কতই না অত্যাচার করেছে। ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্র এমনকি বাংলার মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের ওপর। হত্যা, খুন, লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করেছে যা আজ প্রমাণিত। আরও প্রমাণিত যখন যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড কার্যকর হয় আর তখন পাকিস্তান চিৎকার করে এই বলে যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর তার সন্তান হুম্মাম কাদের দম্ভের সাথে বলেছে ‘এই হত্যার বিচার একদিন হবে’ তার মানে মুক্তিযুদ্ধ চলমান আর হুম্মাম যখন হুংকার দেয় তখন বুঝতে হবে ওদের পরাজয় ওরা মেনে নিতে পারেনি। এদের পিছনে আজও কারা যেন আছে। যারা আছে তাদের খুঁজে বের করে চিহ্নিত করা প্রয়োজন এবং যা মুক্তিযুদ্ধেরই অংশ। পরাজিতরা পরাজয়ের ব্যথা আজও ভুলতে পারেনি। আর পারেনি বলেই এখন আমার মাতৃভূমিকে নিয়ে প্রিয় স্বদেশে ষড়যন্ত্র এবং সংকট সৃষ্টির নিরালস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও ভারতীয় জনতার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় আমাদের বিজয় অনেকাংশে ত্বরান্বিত করেছিল। সেই কারণে আমরা চিরকাল তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। এই সময় যখন দেখি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি সই পরিবেশবাদীদের তুমুল বিরোধিতার মুখে তখন শঙ্কিত হই আমাদের অহংকার সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ ভেবে। বিদ্যুৎ কিংবা আলো কোনো না কোনোভাবে পাওয়া যাবে কিন্তু সুন্দরবন? তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা নিরসন চায় আমার দেশের জনগণ। সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া অতিসত্তর সমাধান করা উচিত আমাদের পুরনো বন্ধু ভারতের। আমরা জানি প্রতিবেশী বদলানো যায় না তাই প্রতিবেশীর স্বার্থে প্রতিবেশীর কর্তব্য আসলেই অনেক। রাজধানীর হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গী হামলা আমাদের সকলের টনক নড়েছে। ২০ জন দেশি-বিদেশি মানুষকে জিম্মি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। যা আমরা মিডিয়ার বদলতে প্রত্যক্ষ করেছি। কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার প্রচেষ্টা এবং মানুষ খুন আরও ভাবিয়ে তুলেছে। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কিত, ভীত এবং শঙ্কীত। অনেকে বলেছেন এই ঘটনা দেশে নতুন। আমি বলব অবশ্যই নতুন তবে আবার নতুন নয়। কারণ যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের পক্ষে আইএস এর দায় স্বীকার করেছে। আইএস আছে কি নাই সেই আলোচনায় আমি যাব না। শুধু বলব আইএস একটি ভাবাদস্যু একটি প্রবণতা আর সেই আদর্শের রাজনীতি বহু আগ থেকেই আমাদের এখানে ছিল এবং আছে। ভবিষ্যতে থাকবে কিনা আমরা তাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করবো কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার আজ সময় এসেছে। আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। রাজনীতি ও ভোটের অংক থেকে নির্মোহভাবে আমাদের হিসাব-নিকাশ করে এই যুদ্ধে ওদের মোকাবেলা করতে হবে। যে কথা বলছিলাম জঙ্গীবাদ নতুন তবে খুব নতুন নয়। এদের বড় ভাইয়ের নাম মৌলবাদ আর আমাদের এখানে মৌলবাদের রাজনীতির নাম জামায়াত। আর জামায়াতের বাচ্চার নাম শিবির। ’৭১ সালের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার যে বিবরণ আমরা পাই কষাই কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মুজাহিদ, সাকা চৌধুরী, মীর কাশেম, নিজামী, সাঈদীরা কি নির্মম বর্বরভাবে মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক আমাদের জাতী গঠনের নির্মাতা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। চোখের ডাক্তারের চোখ তুলে নিয়েছিল, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের হৃদপিণ্ডে বেয়োনেট ডুকিয়ে হত্যা করেছিল। কাউকে কাউকে হত্যার পূর্বে হাত-পা কেটে নিয়েছিল। প্রিয় পাঠক, ভেবে দেখুনতো কত নিষ্ঠুর কত নির্মম, আর ওরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সব ধর্মের নামে। মা-বোনদের বলেছিল মালেগোনিমত। শান্তির ধর্মকে তারা করেছিল মানুষ হত্যার নির্মম হাতিয়ার। ৮০’র দশক থেকে দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলিতে ওদের বাচ্চাদের অর্থাৎ শিবিরের তাণ্ডব আমরা দেখেছি। তারা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছাত্র সংগঠনগুলির নেতা-কর্মীদের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছিল নৃশংসভাবে। নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যায়নি জামায়াত-শিবিরের হাতে খুন হওয়া আমাদের প্রিয় শহীদ জামিল, রিমু, রুপম, ফারুক জাসদ ছাত্র লীগের পিটু, ছাত্র ইউনিয়নের সঞ্জয় তলাপত্রের কথা। ভুলে যায়নি চির পঙ্গুত্ববরণকারী চৈতীর কথা। সর্বশেষ ওরা হত্যা করল ‘আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে’ মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী আওয়াজ তুলে আমাদের প্রিয় সাথী যুব মৈত্রীর নেতা শহীদ রাসেল আহম্মেদ খানকে। সেই লড়াইয়ে কত ছাত্র নেতাকর্মী আহত বা পঙ্গু হয়েছেন। আজ হয়ত আমরা সেই হিসাব রাখি না। শিবির সবই করেছে ধর্মের নামে। গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরাও আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়েই তাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। গুলশানের ঘটনা নতুন, তবে আগে ওরা ২-৫ জনকে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে, এখন ওরা একসাথে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করেছে এটাই নতুন। ওদের হাত থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও মেয়েরাও রক্ষা পায়নি। অনেকেই বলছেন সংকটটি বৈশ্বিক, অবশ্যই বৈশ্বিক। তবে আমাদের এখানে এদের শক্তিকে সঠিকভাবে চিহ্নত করতে না পারলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পাকিস্তানপন্থি মুসলিম লীগ এবং জামায়াতকে রাজনীতিতে পুর্নবাসনের ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। দালাল আইনে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আটককৃত রাজাকারদের জেল থেকে জেনারেল জিয়ার মুক্তিদান নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে। জেনারেল এরশাদের আমাদের রাষ্ট্রকে ইসলামীকরণের নীতিও আমরা ভুলে যাইনি। তারপর খালেদা জিয়ার জামায়াত প্রীতি ও ২০ দলীয় জোটের চর্চা। শত চাপের পরেও জামায়াতকে সাথে নিয়ে চলার খালেদা জিয়ার আগ্রহ ক্ষমতায় থাকাকালীন জামায়াত নেতা নিজামী-মুজাহিদ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বানানোর আমাদের বারবার মনে করতে হবে। আজকে গুলশান বা শোলাকিয়ায় হামলা বিভিন্ন সময় ওলামা মাশায়েক পুরহিতদের হত্যা করল যারা কিংবা বাসে, ট্রেনে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করল যারা তারা কিভাবে এই কর্মসাধন করতে পারছে? এর অর্থ যোগান দাতাই বা কে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে। বৈশ্বিক ঘটনা বা সংকট হলেও এখানে বিষয়টা একটু ভিন্ন। কারণ জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার নীতি যখন বিএনপি নিচ্ছে না তখন বুঝতে হবে এখানে মাস্টার মাইন্ড বিএনপি। কারণ তারা এই পথে ক্ষমতায় যেতে চায়। বিএনপি+জামায়াত এর সাথে ক্রিয়াশীল ১২৫-১৩০টি জঙ্গী সংগঠন রয়েছে। জামায়াত জঙ্গীপানা করে অবশিষ্ট যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করতে, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে আর জামায়াত বিএনপির ক্ষমতার পার্টনার হতে চায়। গবেষণায় বলেছে জামায়তের নামে-বেনামের গড়ে ওঠা ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে লাভ আসে প্রায় ২০০০ কোটি টাকারও বেশি। জামায়াত নিষিদ্ধ এবং এর অর্থের উৎস আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয়করণ করা উচিত ছিল বহু আগে কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। জঙ্গী কর্মকাণ্ডে মূলত মাদ্রাসার গরিব ঘরের সন্তানদের ব্যবহার করা হতো। ব্যবহৃত হতো রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কলেজের শিবিরের কর্মীরা। আজ ব্যবহৃত হচ্ছে ‘রাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত’ স্লোগান দিয়ে গড়ে ওঠা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। যেখানে উচ্চবিত্তের সন্তানরা পড়াশোনার সুযোগ পায়। বিজ্ঞানভিত্তিক একমুখী শিক্ষার দাবি অনেক পুরানো। সেই দাবি বাস্তবায়িত হলে আশা করি এই সংকট সৃষ্টি করা কঠিন হতো। জঙ্গী ঘটনায় নর্থ সাউথের ছাত্র অংশ নেওয়ায় ঘুরে ফিরে নর্থ সাউথের নাম এসেছে। এখন প্রশ্ন নর্থ সাউথের অনুমোদন দিয়েছিল কে? তাদের ট্রাস্টি বোর্ডেই বা কারা ছিলেন বা আছেন? অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কি অবস্থা ত্বরিত তার কোনো প্রকার ব্যবস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয় করতে পারেনি বলেই আমার বিশ্বাস। নজরদারির কথা মন্ত্রীবাহাদুর বলছেন নজরদারি এখন কেন? সরকারি নজরদারিতো রুটিন ওয়ার্ক হওয়ার কথা। জিপিএ ৫ পাইয়ে দিয়ে বাহবা নিচ্ছেন মন্ত্রীবাহাদুর। কিন্তু পেছনের খবরতো সকলের জানা। ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষার খাতায় ভালো নাম্বার দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করাতো আজ সমাজে পরিষ্কার। প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভালো ফল আর দেশপ্রেম এক কথা নয়। নিশ্চয় মন্ত্রীবাহাদুর ভুলে গেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যে যার মতো চালিয়ে যাচ্ছে বেতন থেকে শুরু করে পাঠ্যক্রম পর্যন্ত। কোমলমতি বাচ্চাগুলির বয়সের চাইতে ওদের বইয়ের ওজন বেশি। বিনোদনের কোনো সুযোগ সমাজে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোথাও নেই। যা আছে তা আবার পয়সার বিনিময়ে সেখানে সবার যাওয়ার সুযোগ নাই। পিতা-মাতার অশুভ প্রতিযোগিতা সন্তানদের ভালো ফল করানোর লক্ষ্যে, এতে করে সন্তানটি হয়ে যাচ্ছে কষ্টদায়ক লেখাপড়া নির্ভর বিনোদনের নামে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল নির্ভরতা পেয়ে বসছে। এতে করে বাচ্চাটি হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক পরবর্তীতে হতাশ। আবার পড়াশোনা শেষে পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত উচ্চশিক্ষার সুযোগ আবার শিক্ষা শেষে পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত কর্ম। কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে চাইলে যোগ্যতার আগে প্রয়োজন অর্থ। অর্থাৎ ভর্তি হওয়ার আগে রাজনীতিক বা আমলাদের তুষ্টি অর্জনের ব্যবস্থা। তারপর চাকরিতে সুযোগ নিতে লাগে ঘুষ। যা আজ আর আমাদের সমাজে রাখঢাক নেই, প্রায় ওপেন সিক্রেট। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো এই মহাসঙ্কট মোকাবিলায় অংশগ্রহণ করছে না নাকি পারছে না আমি জানি না। তারা ঘুরছে কিসের পেছনে কে জানে! নির্যাতিত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে হতাশা, আর সেই হতাশা থেকে তারা বেছে নিচ্ছে বিপদগামী পথ। আধুনিক সভ্যতায় ছোট ছোট পরিবার একাকিত্ব আরেকটি কারণ হতে পারে বলে আমি মনে করি। পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার চেষ্টা আমাদের সকলকেই করতে হবে। বিপদগামীদের সুযোগ বুঝে দলে ভিড়াচ্ছে জঙ্গীবাদীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গীদের রুখতে শিক্ষক-অভিভাবকরা যেমন সচেতন হবেন তেমনিভাবে স্কুল পর্যায়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলিকেও যথেষ্ঠ উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। রিক্রুটমেন্ট পলিসি ঠিক করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা করতে না পারলে জঙ্গীবাদীরা জিতবে। ওরা রিক্রুটমেন্টের ব্যাপারে সক্রিয়, যেখানে আমাদের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক মানুষকে পাড়া মহল্লায় সন্তানদের সুনাগরিক হওয়ার প্রশ্নে উদ্যোগী ও যতবান হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে ক্লাব, পাঠাগার, আয়োজন করতে হবে বিশেষ দিনের বিশেষ আয়োজন চিত্রাঙ্কন, নাচ, গান, আবৃতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। সঠিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। উদ্যোগের অভাবে বিজয়ী জাতি পরাজিত হতে পারে। সরকারকেও অভিভাবকের ভূমিকা নিতে হবে। শুধু উন্নয়নের বন্যায় ভেসে যেতে পারে আমাদের অনেক কিছু। দুর্নীতি থামানো জরুরি, জরুরি সুশাসন। আমরা যখন নিষ্ক্রিয় কর্মী সংগ্রহে তখন ওরা নীরবে নিভৃতে কর্মী সংগ্রহ করছে এবং সেই কর্মী বিভিন্ন নামের জঙ্গী সংগঠনগুলিকে সরবরাহ করছে। এটা এখন বাস্তবতা। আমরা দেখেছি জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন ছাত্র লীগের মধ্যে শিবির প্রবেশ করেছে। তৃণমূলে আওয়ামী লীগ জামায়াতের মিত্রতা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। টিভি চ্যানেলগুলিতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠান থাকা জরুরি, আজ যা দেখি না। যা দেখি বিনোদনমূলক শিক্ষামূলক নয়। টিভিতে যা দেখি তার মধ্যে সমাজের উচুতলার প্রেম সুখ দুঃখ নিয়ে চিত্রায়িত করা। অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা দেশজাতি গঠনে উল্লেখ করার মতন কোনো অনুষ্ঠান দেখা যায় না বললেই চলে। যা দেখি তা খুবই সামান্য। আর তাই মানুষ ঝুঁকছে অন্য দেশের চ্যানেলগুলির দিকে। যা অবশ্যই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য হুমকি। হলি আর্টিজামে আক্রমণের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমার অনেকটা অসহায় মনে হয়েছে, পেশাদার মনে হয়নি, টেলিভিশনে যা দেখেছি। টেলিভিশনেও দেখলাম রাস্তাঘাটেও দেখি প্রায় কর্তব্যরত পুলিশ মোবাইলফোনে কথা বলছেন। আমি জানি না কর্তব্যরত অবস্থায় ব্যক্তিগত কোনো বিষয় অগ্রাধিকার পাবে কিনা। নিখোঁজদের অভিভাবকের অনেকেই পুলিশকে তাদের নিখোঁজ সন্তান খুজে পাওয়ার জন্য বলেছেন। পুলিশ নাকি বলেছে আপনারা বড়লোক সন্তান কোথাও হয়তোবা বেড়াতে গিয়েছে। এটা অবশ্যই কর্তব্য অবহেলা, যদি ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে! পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, গ্রেফতার বাণিজ্য থেকে চাঁদা আদায় পর্যন্ত। পুলিশের দুর্নীতি প্রমাণিত। পুলিশ বাহিনীকে দুর্নীতি মুক্ত করে তাদের পেশাদারিত্ব ও সক্ষমতা অর্জনের জরুরি পদক্ষেপ দরকার। গোয়েন্দাদেরও জাতীয় স্বার্থে আরও বেশি সজাগ, সতর্ক থাকা প্রয়োজন। পুলিশ বাহিনীর ২ জন কর্মকর্তা নিহত ও বহু আহত হওয়া অবশ্যই খুব দুঃখের। শোকাহত পরিবার পরিজনদের প্রতি আমার সমবেদনা, তার সাথে অনেক শ্রদ্ধা সাহসী ২ বীর পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি। যাই হোক পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সফল অভিযানে আক্রান্ত স্থান নিয়ন্ত্রণে আসে। অভিযান পরিচালনার আগে জিম্মি কয়েকজন পালিয়ে যাচ্ছিল, পত্রিকায় দেখলাম জঙ্গীরা বলছিল ‘তোমরা পালিয়ে যাচ্ছো আর আমরা বেহেশতে যাচ্ছি।’ এটা ভয়ঙ্কর। এই উক্তি তখনই আসে যখন সে ওয়েল মটিভেটেড হয়। তাদের মটিভিশন দিচ্ছে কারা? কোথায় বা তাদের প্রশিক্ষণ হয়? কেনইবা পুলিশ তাদের সবগুলি আস্থানা খুঁজে পাচ্ছে না। আজ আমরা কেউই নিরাপদ নই এটা সত্য। কিন্তু সমাজে, রাষ্ট্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলকে মিলেই নিতে হবে। পুলিশকে সততা নিষ্ঠার সাথে এই কর্ম সাধন করতে হবে। খালেদা জিয়া মনে মনে এই সঙ্কটের মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষ থাকলেও এই দানব এখন রুখতে না পারলে তাকেও গিলে খাবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল কর্মী বিশ্বজিৎ, তপন, নতুনকে নির্মমভাবে খুন করেছিল শিবিরের সন্ত্রাসীরা। খালেদা জিয়ার মনে থাকার কথা নয় তারপরও তাকে মনে করিয়ে দিতে চাই তার শাসনামলেই শিবির খুন করেছিল ওই তিনজন মেধাবি ছাত্রকে। এই দানবরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশে তারা নোঙ্গর করার চেষ্টা করছে। আমেরিকার মদদ রয়েছে এই জঙ্গীদের সৃষ্টিতে যা আমরা সবাই জানি। রয়েছে ইসরাইল, তুরস্কসহ আমেরিকার তোসামদকারী অনেক রাষ্ট্র। ইরাক আক্রমণ ভুল ছিল বলে আলোচনায় এসেছে। ওদের ভুলের খেসাড়ত দিচ্ছে বিশ্ববাসী। সাথে আমরাও যুক্ত হবার পথে। কথায় আছে ‘আমেরিকা সর্প হইয়া দংশন করে, ওঝা হয়ে ঝাড়ে।’ তাই সাধু সাবধান। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী সোচ্চার হলেও আওয়ামী লীগকে সোচ্চার হতে দেখি না। যতটুকুই দেখি তা যথেষ্ঠ নয়। রাজনৈতিক দলগুলো জঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্য জরুরি। কারণ ভয়ার্ত মানুষকে অভয় দিতে পারে শুধুমাত্র রাজনীতি। শুনি না আমার বাড়ির পাশের গোলিতে মিছিলের আওয়াজ। যেখানে আওয়াজ তোলা হচ্ছে ‘বীর জনতা ভয় নাই, আমরা আছি লাখো ভাই’ কিংবা ‘জঙ্গীবাদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না।’ নেতা নেত্রীর নামে স্লোগান বড় বড় জনসভাতে শুনা গেলেও গোলির ভিতর ছোট্ট মিছিলটাও অভয় দিতে পারে জনগণকে। মানুষকে স্বপ্নবান করা, ভবিষ্যতে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ দেয়ার অঙ্গীকার সরকারকেই করতে হবে। বাস্তবায়নও দেখাতে হবে তাদের কাজের। এই প্রসঙ্গে রাজনীতিকদের এবং তাদের কর্মসূচি গ্রহণ তাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। অভয় দিয়ে জনতাকে রাস্তায় নামানো আজ রাজনৈতিক দলসমূহের প্রথম ও প্রধান কাজ। রাজনীতিকদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস স্থাপনের কাজটি রাজনীতিকদেরই করতে হবে। সরকারিভাবে কিছু সভা ডিসি ইউএনও পুলিশ দিয়ে জঙ্গীবাদী সঙ্কট কতটুকু মোকাবেলা বা প্রতিরোধ করা যাবে তা সময়ই বলে দেবে। যে লড়াই আজ চলমান সেই লড়াই এগিয়ে নিতে ভয় পেলে চলবে না। আমরা বিজয়ী জাতি ভয়কে জয় করে হাতে হাত ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে প্রিয় স্বদেশ রক্ষায়। এর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই
[লেখক : সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ যুব মৈত্রী ও সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী
- See more at: http://bm.thereport24.com/article/162714/index.html#sthash.f9F1n90P.dpuf
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন